ছয় ম্যাচ পর বিশ্বকাপ ক্রিকেটে জয়ের দেখা পেলো বাংলাদেশ দল। দি্ল্লীর অরুণ জেটিল স্টেডিয়ামে, নাজমুল হোসেন শান্ত ও সাকিব আল হাসানের জোড়া হাফ সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ ৩ উইকেটে হারিয়েছে শ্রীলঙ্কাকে। আগে ব্যাট করে শ্রীলঙ্কা অলআউট হয় ২৭৯ রানে। জবাবে ৪১ ওভার ১ বলে জয় পায় বাংলাদেশ। এই জয়ে ২০২৫ সালে অনুষ্টিতব্য আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আশা বাঁচিয়ে রাখল সাকিব আল হাসানের দল।
সোমবার (৬ নভেম্বর) দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার দেয়া ২৮০ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে আরও একবার উদ্বোধনী জুটিতে বড় রান পায়নি বাংলাদেশ। তানজিদ হাসান তামিম এদিন ফেরেন তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই। ৫ বলে ২ চারে ৯ রান করে আউট হন তিনি। আরেক ওপেনার লিটন দাসও নিজের রানটা বড় করতে পারেননি।
তামিম-লিটনের বিদায়ের পর দুর্দান্ত এক জুটি গড়ে তোলেন সাকিব আল হাসান ও নাজমুল হোসেন শান্ত। তৃতীয় উইকেটে ১৪৯ বলে ১৬৯ রানের জুটি গড়েন তারা। তবে দুর্দান্ত ব্যাটিং করা সাকিব ৬৫ বলে ২ ছক্কা ও ১২ চারের ইনিংসে ৮২ রান করে আউট হয়ে যান।
টাইগার এই অলরাউন্ডারকে আউট করার পর হাতে ঘড়ি দেখানো উদযাপন করেন ম্যাথুস, প্রথম ইনিংসে হওয়া ‘টাইমড আউট’ নিয়ে খোঁচা দেন তিনি। সাকিবের মতো শতক হাঁকানোর সুযোগ থাকলেও সেই ম্যাথুসের বল নার্ভাস নাইন্টিজে আউট হন শান্ত।
এরপর দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন রিয়াদ ও মুশফিক। তারা দুজনে মিলে দলকে সহজ জয়ের পথেই রেখেছিলেন। তবে দ্রুতই ৩ উইকেট হারিয়ে পরাজয়ের শঙ্কা তৈরি করে দিয়েছিল বাংলাদেশ দল। ৭ বলে ১৫ রান করে দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন তাওহীদ হৃদয়।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে শ্রীলঙ্কার হয়ে ইনিংস উদ্বোধনে নামেন পাথুম নিশাঙ্কা ও কুশল পেরেরা। তবে শুরুটা ভালো করতে পারেননি লঙ্কানরা। ইনিংসের প্রথম ওভারেই টাইগারদের আনন্দে ভাসান শরিফুল ইসলাম। ওভারের শেষ বলে মুশফিকুর রহিমের তালুবন্দী হয়ে সাজঘরে ফেরেন কুশল পেরেরা। আউট হবার আগে মাত্র ৪ রান করেন এই ব্যাটার।
তবে দ্বিতীয় উইকেটে শুরুর ধাক্কা সামলে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন নিশাঙ্কা ও কুশল মেন্ডিস। পাওয়ার প্লের বাকিটা সময় নির্বিঘ্নে কাটান দুজন, গড়েন পঞ্চাশোর্ধ রানের জুটি। ক্রমেই ভয়ংকর হয়ে উঠতে থাকা এই জুটি ভাঙেন টাইগার অধিনায়ক। দলীয় ৬৬ রানে লঙ্কান অধিনায়ক ফেরেন ১৯ রানে।
সঙ্গীর বিদায়ের পর দ্রুত সাজঘরে ফেরেন নিশাঙ্কাও। দলীয় ৭২ রানে বিশ্বকাপে অভিষেক হওয়া তানজিম সাকিবের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরার আগে করেন ৪১ রান। এরপর চতুর্থ উইকেট জুটিতে দলের হাল ধরেন সাদিরা সামারাবিক্রমা ও চারিথ আসালঙ্কা।
দুই মিডেল অর্ডার ব্যাটার মিলে বাংলাদেশের বোলারদের উপর চড়াও হন। ক্রমেই বিধ্বংসী হয়ে উঠা জুটি ২৫তম ওভারে ভাঙেন টাইগার অধিনায়ক সাকিব। দলীয় ১৩৫ রানে চতুর্থ উইকেটের পতন ঘটে সাদিরা সাজঘরে ফিরে গেলে ম্যাচে ফিরে বাংলাদেশ। তবে সেই ওভারেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ১৪৬ বছরের ইতিহাসে ভিন্ন রকম এক ঘটনা ঘটে।
বাংলাদেশের বিপক্ষে ২৫তম ওভারে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ব্যাটার হিসেবে টাইমড আউট হয়েছেন ম্যাথিউস। কোনো বল খেলার আগেই টাইমড আউট হয়ে গেছেন তিনি। যে হেলমেট নিয়ে নেমেছিলেন, তাতে পুরো নিরাপদ বোধ করেননি তিনি। ফলে আরেকটি হেলমেট আনা হয়, কিন্তু সেটিও উপযুক্ত মনে করেননি এই ব্যাটার। এসবের মাঝে সময় গড়াতে থাকে, ফলে টাইগার অধিনায়ক সাকিব আবেদন করলে আম্পায়াররা আউট ঘোষণা দেন।
ফলে কোন বল না খেলেই সাজঘরে ফিরেন ম্যাথিউস। দলীয় ১৩৫ রানে পঞ্চম উইকেটের পতন ঘটলেও দলের রানের চাকা সচল রাখেন চারিথ আসালঙ্কা।
শেষ দিকে ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ও মাহিথ থিকসানাকে সঙ্গে নিয়ে শ্রীলঙ্কার বড় রানের পুঁজি নিশ্চিত করেন আসালঙ্কা। সেই সঙ্গে এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে তুলে নেন তার ক্যারিয়ারের প্রথম বিশ্বকাপ শতক। এই বাঁহাতি ব্যাটারের শতকে ভর করে ৪৯.৩ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৭৯ রানের সংগ্রহ পায় লঙ্কানরা। শ্রীলঙ্কার হয়ে সর্বোচ্চ ১০৮ রান করেন আসালঙ্কা। টাইগারদের হয়ে ৩টি উইকেট নেন তানজিম সাকিব। ২টি করে উইকেট নেন সাকিব আল হাসান ও শরিফুল ইসলাম।